পরিচিতি
জন্মঃ-
ক্ষন জন্মা এ মহা মনীষী বর্তমান চাঁদপুর জেলার শাহারাস্তি উপজেলার দক্ষিণ সূচী পাড়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে ১৯১০ ইং সনের কোন এক শুক্রবার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম দ্বীনি পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার আব্বা মুনশী আব্দুল জলীল ছিলেন অত্যন্ত খোদাভীরু,সজ্জন ও সমাজের আস্থা ভাজন, সূ পন্ডিত ও কুরআন প্রেমিক। মুনশী আব্দুল জলীলের বৃদ্ধ
বয়সে শিশু বেলায়েতের জন্ম। বাবা সন্তানের জন্য উপহার হিসাবে রেখে যান তাফসীর সম্বলিত পবিত্র কুরআন।
শৈশবঃ-
মহান আল্লাহর কুদরত বুঝা মানুষের পক্ষে বড় দূরহ। মানব ইতিহাসে তিনি যাদের কে অনুসারী অনুকরনীয় করেন তাদের কে ইয়াতিম অনাথ অভিভাবকহীন করে তাদের লালন পালনের দায়িত্ব ভার নিজ হাতে রাখেন। শাইখুল কুরআনের বেলায় ও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। আড়াই বছর বয়সে পিতার ¯েœহ হতে বδিত ছয় বছর বয়সে মমতাময়ী মাকে হারিয়ে পরিপূর্ণ ইয়াতিম হয়ে আল্লাহর রহমতের ঝর্না ধারায় বেড়ে উঠেন।
শিক্ষা জীবনঃ-
প্রথমে আপন চাচার নিকট হাতে খড়ি পরে স্বীয় খালাতো বোনের বাড়ীতে যায়গীর থেকে প্রাইমারি ও মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তীতে চাঁদপুর ফরিদ গঞ্জের বার পাইকা মাদরাসায় দু’বছর ও পাশর্^বর্তী ইসলামিয়া মাদরাসায় কয়েক বছর, সর্বশেষ ঢাকার বড় কাটারা আশ্রাফুল উলুম হুসাইনিয়া মাদরাসায় শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটে। গুরু গাম্ভীর্যতা ও নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী হওয়াতে ছাত্র জীবনেই শিক্ষকদের নজর কাড়েন। বড় কাটারায় মুজাহিদে আযম আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী ও আমীরে শরীয়ত মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য লাভ করে ধন্য হন।
কর্ম জীবনঃ-
আল্লামা শামসুল হক ফরীদপুরী(রহঃ) তরুন আলেমে দ্বীন মাও: বেলায়েত হুসাইন এর সুপ্ত প্রতিভা,তীক্ষèমেধা,দীপ্তময় চেহারা দেখে স্বীয় মাদরাসা গওহর ডাঙ্গায় শিক্ষক হিসাবে নিয়োজিত করেন। পরবর্তীতে শামসুল হক ফরীদপুরীর নির্দেশে চাঁদপুর জাফরাবাদ হাফেজিয়া মাদরাসার মোহতামিম এর দায়িত্ব গ্রহন করে মাদরাসাকে দাওরায়ে হাদীসে উন্নীত করে সফলতার সূ-খ্যাতী অর্জন করেন।
নূরানী পদ্ধতীর গবেষনাঃ-
শাইখুল কুরআন ছাত্র জীবনেই ছিলেন তাহাজ্জুদের পাবন্দ, তাঁর নামাজ ছিল খুশুখুজু ও একাগ্রতায় ভরপুর জীবন্ত নামায, যেন সাহাবায়েকেরামের নামাযের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। প্রিয় নবীজির ইলমে নববীর সত্যিকারের ওয়ারিছ। নবীজির একটি হাদীস তাকে ব্যাথিত করে তুলেছিল, طلب العلم فريضة علي كل مسلم
“ইলমেদ্বীন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয”। তিনি ভাবতেন মাদরাসায় যারা দ্বীন শিখতে আসে তাদের সংখ্যা নগন্য, আর যারা মাদরাসায় আসেনা তাদের সংখ্যা অসংখ্য অগনিত। সমাজের এ বিশাল জন গোষ্ঠির কথা চিন্তা করে ব্যাথিত ও মর্মাহত হতেন। পবিত্র কুরআন মাজীদ ও জরুরী দ্বীন শিক্ষা করা ছাড়া পরকালে মুক্তির কোন পথ নেই। ষোল আনা মুসলমান কে জাহান্নামের অগ্নি থেকে রক্ষা করতে দ্বীন শিক্ষার বিকল্প নেই। শত ভাগ মুসলমানের সন্তানদের কে নাজাতের ফিকির নিয়ে কওমী মাদরাসার ১৩ বছরের খ্যাতিমান সফল শিক্ষকতার জীবনকে ছেড়ে পবিত্র কুরআনের তরে নিজকে উৎসর্গ করে উম্মতের দরদে দরদী হয়ে মুক্তির পথের সন্ধানে আগে বাড়তে থাকেন । এবার তিনি পবিত্র কুরআনের এ আয়াতে আশার আলো খুজে পেলেন। ولقد يسرناالقران لذكرفهل من مدكر (সুরা কামার, আয়াত ১৭)
“অবশ্যই আমি কুরআনকে অতি সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহনের জন্য, অতএব উপদেশ গ্রহন কারী কেহ আছে কি?”এ আয়াত কে সামনে রেখে তিনি মহান রবেব দরবারে আকুতি পেশ করতে থাকেন। হে আল্লাহ! আপনি দয়ার সাগর করুনার আধার আপনার কথা চির সত্য, কুরআন অতি সহজ কিন্তু আমরা যে সে সহজ পথ হারিয়ে ফেলেছি। আপনি দয়া করে আমাদিগকে আপনার বর্নিত সহজ পথ দেখিয়ে দিন।
মর্মস্পর্শী ব্যাথিত হৃদয়ে মহান প্রভূর সমীপে অশ্রু বিসর্জনের মাধ্যমে নিবেদন পেশ করতে থাকেন এবং চেষ্টা ও ফিকিরের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে বেড়িয়েছেন মুসলমানদের সন্তানদের দরদে। কাজের ফাকে ফাকে ছোট শিশুর ন্যায় কাঁদতে থাকতেন। চলার পথে চিন্তার গভীরতায় গন্তব্য হারিয়ে ফেলতেন। রাতের প্রহর গভীর হলেই মহান রবেব সমীপে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে অশ্রু ঝরিয়ে শশ্রু ভিজিয়ে আপন সৃষ্টি কর্তার সান্নিধ্যে বিভোর হয়ে যেতন। দীর্ঘ দিনের কাকুতি মিনতি অশ্রু বিসর্জনের ফলে তিনি দয়াময় প্রভূর রহমতের ইশারায় পবিত্র কুরআন শিক্ষার সহজ পদ্ধতি লাভ করেন যা পরবর্তীতে নূরানী কুরআন শিক্ষা পদ্ধতি নামে সুখ্যাতি লাভ করে। এ পদ্ধতি বর্তমানে বাংলাদেশ সহ বিশ্ব মুসলমানদের জন্য জরুরী দ্বীন শিক্ষার ও পবিত্র কুরআন মাজীদের তেলাওয়াত শেখার এক অলৌকিক দুয়ার খুলে দিয়েছে। আল হামদুলিল্লাহ , আজ বাংলাদেশের মুসলমানদের নিকট পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত সহজ ও সমাদৃত, নূরানী পদ্ধতি গ্রহনীয় ও নন্দিত। যুগের চাহিদাকে সামনে রেখে জাগতিক শিক্ষার সমন্নয় সাধন করে নূরানী শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রানবন্ত করা হয়েছে। নূরানী মাদরাসার বরকতে হাজারো বেকার যুবকের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে, নিরক্ষরতার অভিসাপ হতে জাতির মুক্তির পথ সূগম হয়েছে।
পারিবারিক জীবনঃ-
পারিবারিক জীবনে তিনি ১ স্ত্রী ৩ মেয়ে ও ছয় পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন, ছেলেরা সকলেই হাফেজ আলেম ও স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
রব্বে কারীমের সান্নিধ্যে গমন:-
মহাকালজয়ী এ কিংবদন্তি
২৮ রমযানুল মুবারক ১৪৩৮ হি:,
১০ আষার ১৪২৪ বাংলা,
২৪ জুন ২০১৭ ইংরেজী,
রোজ শনিবার দুপুর ১২.২৫ মিনিটে ঢাকার মোহাম্মদপুরস্থ ২৮ নং প্রবাল হাউজিং এর তৃতীয় তলায় মাহবুবে হাকীকির আহবানে সাড়া দিয়ে তার সান্নিধ্যে চলে যান। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আমাদের দৃঢ় বিশ^াস শাইখুল কুরআনের রেখে যাওয়া নূরানী সিলেবাসকে প্রাথমিক পর্যায়ে সিলেবাস হিসাবে অনুসরন করলে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পাবে আলোকিত জাতি হিসাবে। পবিত্র কুরআনের আলোতে দূর হবে অমানিশা, উম্মত পাবে সঠিক পথের দিশা। বন্ধ হবে হিংসা বিদ্বেষ হানা-হানি। গড়ে উঠবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। বয়ে আনবে ইহকাল ও পরকালের মুক্তি।